Karar Oi Louho Kopat Lyrics (কারার ঐ লৌহকপাট) Nazrul Sangeeet
Karar Oi Louho Kopat Lyrics – কারার ঐ লৌহকপাট – কাজী নজরুল ইসলামের কালজয়ী বিদ্রোহী কবিতার গান। দ্রুত দাদরা তালে রচিত এই কবিতায় রয়েছে স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষা ও বিদ্রোহের ভাষ্য।
“কারার ঐ লৌহকপাট” হল কাজী নজরুল ইসলামের একটি বিখ্যাত বিদ্রোহী ও বিপ্লবী গান/কবিতা, যা ব্রিটিশ শাসনকালে লেখা হয়েছিল। এটি নজরুলের অগ্নিগর্ভ সাহিত্যিক রচনার অন্যতম উদাহরণ, যেখানে তিনি ঔপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রাম ও স্বাধীনতার আকাঙ্ক্ষাকে জোরালোভাবে প্রকাশ করেছেন।
গানের বিবরণ
🎵 গানের নাম: কারার ঐ লৌহকপাট
✍️ গীতিকার: কাজী নজরুল ইসলাম
🎶 তাল: দ্রুত দাদরা
📜 ধরণ: বিদ্রোহী কবিতার গান
Karar Oi Louho Kopat Lyrics – কারার ঐ লৌহকপাট গানের লিরিক্স
কারার ঐ লৌহকপাট
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত-জমাট শিকল পূজার পাষাণ-বেদী।
ওরে ও তরুণ ঈশান
বাজা তোর প্রলয় বিষাণ,
ধ্বংস নিশান উড়ুক প্রাচীর প্রাচীর ভেদি।
গাজনের বাজনা বাজা
কে মালিক, কে সে রাজা,
কে দেয় সাজা মুক্ত স্বাধীন সত্য কে রে?
হা হা হা পায় যে হাসি,
ভগবান পরবে ফাঁসি,
সর্বনাশী শিখায় এ হীন তথ্য কে রে।
ওরে ও পাগলা ভোলা
দে রে দে প্রলয় দোলা,
গারদগুলা জোরসে ধরে হ্যাচকা টানে।
মার হাঁক হায়দারী হাঁক,
কাঁধে নে দুন্দুভি ঢাক
ডাক ওরে ডাক মৃত্যুকে ডাক জীবন পানে।
নাচে ওই কালবোশাখী
কাটাবী কাল বসে কি?
দেরে দেখি ভীম কারার ঐ ভিত্তি নাড়ি।
লাথি মার ভাঙ্গরে তালা,
যত সব বন্দী শালায়
আগুন-জ্বালা, আগুন জ্বালা,
ফেল উপাড়ি।
কারার ঐ লৌহ কপাট
ভেঙ্গে ফেল কর রে লোপাট,
রক্ত জমাট শিকল পূজার পাষাণ বেদী।
গানের বিশেষ দিক
✅ জাতীয়তাবাদী বার্তা: স্বাধীনতা আন্দোলনে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে।
✅ সাহসিকতার প্রতীক: “মৃত্যু-ভয় ভাঙি রে ডোর” লাইনটি যুবসমাজকে উদ্বুদ্ধ করত।
✅ নজরুলের স্বকীয়তা: রবীন্দ্রপ্রভাব থাকলেও এতে বিদ্রোহের আগুন স্পষ্ট।
আরও পড়ুনঃ Sokhi Tora Prem Korio Na Lyrics (সখি তোরা প্রেম করিও না) Abdul Karim
“কারার ঐ লৌহকপাট” – নজরুলের অগ্নিঝরা সংগ্রামী সঙ্গীতের গভীরে
কাজী নজরুল ইসলামের এই গানটি শুধু একটি কবিতা বা গান নয়, এটি ঔপনিবেশিক শোষণের বিরুদ্ধে এক চিরন্তন যুদ্ধের ডাক। নজরুলের সৃষ্টিতে এই গানের বিশেষ স্থান রয়েছে। আসুন, গানটির আরও কিছু গভীর তাৎপর্য ও ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জেনে নিই:
১. গানটির রচনাকাল ও প্রেক্ষাপট
- নজরুল এই গানটি রচনা করেছিলেন ১৯২০-৩০ সালের দিকে, যখন তিনি ব্রিটিশ রাজের বিরুদ্ধে সরাসরি বিদ্রোহে সামিল ছিলেন।
- তিনি নিজেও কারাবরণ করেছিলেন ব্রিটিশ সরকারের হাতে, সেখানেই জেলের অন্ধকার প্রকোষ্ঠে এই গানের জন্ম।
- এটি “অগ্নিবীণা” (১৯২২) কাব্যগ্রন্থের অন্তর্গত, যা ব্রিটিশ সরকার নিষিদ্ধ করেছিল!
২. গানের কথায় লুকিয়ে থাকা প্রতীক ও অর্থ
- “লৌহকপাট”: ব্রিটিশ জেলখানার দরজা, যা শুধু লোহার তৈরি নয়, এটি ঔপনিবেশিক শৃঙ্খলের প্রতীক।
- “রক্ত-জমাট শিকল”: দীর্ঘদিনের শোষণে জমাট বাঁধা রক্ত, যা এখন বিদ্রোহের আগুনে গলে যাবে।
- “মৃত্যু-ভয় ভাঙি রে ডোর”: নজরুলের দর্শন – মৃত্যুভয় যার নেই, সে-ই প্রকৃত মুক্ত।
৩. গানটির সঙ্গীতায়োজন ও জনপ্রিয়তা
- নজরুল নিজেই গানটিকে রাগ-প্রধান সুরে বাঁধেন, যেখানে বাউল ও কীর্তনের প্রভাব রয়েছে।
- এটি নজরুলগীতি হিসেবে স্বীকৃত, এবং রবীন্দ্রনাথের পরেই নজরুলের গান বাংলা সংগীত জগতে বিপ্লব এনেছিল।
- পরবর্তীকালে হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, শ্যামল মিত্র, অনুপ ঘোষালের কণ্ঠে গানটি নতুন প্রাণ পায়।
৪. গানটি কেন আজও প্রাসঙ্গিক?
✅ শোষণের বিরুদ্ধে চিরন্তন সংগ্রাম: গানটি শুধু ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে নয়, যেকোনো অত্যাচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর বার্তা দেয়।
✅ যুবসমাজের প্রেরণা: “ভয় কী তোর? ভয় কী তোর?” – এই লাইনটি আজও তরুণদের সাহস জোগায়।
✅ সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ: বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বা ভারতের নকশাল আন্দোলনে এই গান গেয়ে মানুষ সংগ্রামী চেতনা জাগিয়েছে।
৫. গানটি নিয়ে চর্চা ও বিতর্ক
- কিছু সমালোচক বলেন, নজরুলের গান অতিমাত্রায় বিদ্রোহী, কিন্তু তাঁর সমর্থকরা বলেন, এটি গণমানুষের কণ্ঠস্বর।
- ব্রিটিশ সরকার এই গানকে “প্ররোচনামূলক” বলে আখ্যা দিয়েছিল এবং নজরুলের অনেক লেখার মতোই এটি নিষিদ্ধ হয়েছিল।
৬. গানটি শেখার ও শোনার উপায়
- শিখতে চাইলে: নজরুলগীতির স্বরলিপি বা ইউটিউব টিউটোরিয়াল দেখুন।
- শ্রেষ্ঠ সংস্করণ:
- হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের কণ্ঠে (ক্লাসিক ভার্সন)
- শ্যামল মিত্রের গায়কি (আধুনিক আবেদন)
- বাংলাদেশের শিল্পী ফকির আলমগীরের বিদ্রোহী সংস্করণ
🎧 শুনুন এখানে: YouTube লিংক
৭. নজরুলের অন্যান্য বিদ্রোহী গানের সঙ্গে তুলনা
- “চল চল চল”: জাতীয়তাবাদী মার্চিং সঙ্গীত।
- “দুর্গম গিরি কান্তার মরু”: সংগ্রামী পথের কঠিনতা বর্ণনা।
- “ভাঙো গড়ো”: পুরাতনকে ভেঙে নতুন সৃষ্টির আহ্বান।
“কারার ঐ লৌহকপাট” এই সব গানের মধ্যে সবচেয়ে আক্ষরিক অর্থে অগ্নিগর্ভ!
উপসংহার
নজরুলের এই গান কেবল অতীতের документ নয়, এটি বর্তমানের শোষণ-বৈষম্যের বিরুদ্ধেও এক শাণিত অস্ত্র। গানটি শুনলে বা পড়লে আজও বুকের ভেতর বিদ্রোহের আগুন জ্বলে ওঠে – আর এটাই নজরুলের অমর সৃষ্টির শক্তি।
“মরণ-ডরে মরিস নে রে, মরণ তোরে ডরায় রে!”
– কাজী নজরুল ইসলাম
(আরও জানতে চাইলে নজরুলের “বিদ্রোহী” কবিতা বা “অগ্নিবীণা” কাব্যগ্রন্থ পড়ুন!)
FAQs (প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন)
১. এই গানটি কোন কবিতার অংশ?
- এটি নজরুলের “বিদ্রোহী” কবিতার ধারাবাহিকতায় রচিত, তবে স্বতন্ত্র গান হিসেবেও জনপ্রিয়।
২. গানটির সুরকার কে?
- নজরুল নিজেই গানটির সুরারোপ করেন, যা নজরুলগীতির অন্তর্ভুক্ত।
৩. এটি কোন চলচ্চিত্র বা নাটকে ব্যবহৃত হয়েছে?
- বিভিন্ন স্বাধীনতা সংক্রান্ত নাটক ও চলচ্চিত্রে (যেমন: “খেয়াল” বা ডকুমেন্টারি) ব্যবহৃত হয়েছে।
৪. “লৌহকপাট” বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
- এটি জেলের দরজা বা ব্রিটিশ শাসনের প্রতীকী বন্দিদশা-কে নির্দেশ করে।
৫. গানটি কি এখনও জনপ্রিয়?
- হ্যাঁ, বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে জাতীয় দিবস বা বিপ্লবী অনুষ্ঠানে গাওয়া হয়।
৬. নজরুল কেন এই গান লিখেছিলেন?
- ব্রিটিশ জেলখানায় বন্দি অবস্থায় তিনি শোষণ ও দাসত্বের বিরুদ্ধে এই গান রচনা করেন।